রেকর্ড গরমে পুড়ছে পাহাড়, পর্যটক শূন্যতায় ধুঁকছে শৈলরানি দার্জিলিং
পর্যটক শূন্য দার্জিলিংয়ের(Darjeeling) ম্যালও ফাঁকা। স্থানীয়দের যে ভিড়টা থাকে সারা বছর, তাও উধাও সকালের পর। আস্তাবলে থাকা ঘোড়াগুলি লালা ঝড়াচ্ছে ক্লান্তিতে। চকবাজারও যেন শুনসান। চেনা ভিড়টা নেই। দোকানে বসে থাকা ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত ফ্যানের হাওয়ায় শরীরটাকে একটু ঠাণ্ডা করার তাগিদে। মোটর স্ট্যান্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলির ভিতরে চালক আছেন, কিন্তু বিভিন্ন গন্তব্যের ঠিকানা আওড়ে চিৎকার নেই তাঁদের মুখে। বরং গাড়ির মধ্যে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালিয়ে শরীরটাকে এলিয়ে দিয়েছেন সিটে। স্বস্তির পাহাড়ে এমন অস্বস্তির ছবি শেষ কবে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না শৈলরানির প্রবীণরাও। শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যে অবশ্য স্পষ্ট হল, এদিন দার্জিলিং ভেঙে দিয়েছে সেপ্টেম্বরের নিরিখে ১৯৭৩ সালের রেকর্ড। ওই বছর ৩ সেপ্টেম্বর দার্জিলিংয়ের রাজভবনের রেকর্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এদিন তা ভেঙে দার্জিলিং পৌঁছে গিয়েছে ২৮.২-এ। যদিও অক্ষত রয়েছে ১৯৭০ সালের ২১ অগাস্টের সর্বকালীন (২৮.৫) রেকর্ড। তবে তা কতদিন থাকবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। শুধু দার্জিলিং নয়, এদিন ১৯৯৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের গড়া রেকর্ড (২৭.১) ভাঙতে না পারলেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে এদিন গ্যাংটক পৌঁছে যায় ২৬.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অর্থাৎ দুই রাজ্যের দুই পাহাড়ই এদিন হাঁসফাঁস করেছে।
এ যেন অদৃশ্য লড়াই পাহাড়-সমতলের। গত কয়েকদিন ধরেই দহনজ্বালায় জ্বলছে উত্তরবঙ্গের সমতল। একটু স্বস্তির খোঁজে অনেকেই ‘দে ছুট’ বলে বেড়িয়ে পড়ছেন পাহাড়ে। কিন্তু স্বস্তি নেই পাহাড়েও। সাধারণত এসময় গাড়ির চাকা কার্সিয়াংয়ের পথ ধরলেই এসি বন্ধ করে দিয়ে গাড়ির কাচ খুলে দেওয়াটা দস্তুর। কিন্তু এবছর আর সেই উপায় নেই। গাড়ির কাচ খুললে হিমেল হাওয়ার পরিবর্তে গাড়ির মধ্যে প্রবেশ করছে যেন আগুন হাওয়া। যথারীতি গাড়ির কাচ আবার বন্ধ। দার্জিলিং গিয়ে হয়তো একটু আরাম পাওয়া যাবে, এমন আশায় যাঁরা পাকদণ্ডির আরও পথ পেরিয়েছেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছেন ‘সেই শৈলরানি আর নেই’। তাই তো চাঁদমারি বাজারের টুপি বিক্রেতা সুমিত্রা গুরুং কিছুটা মজা করেই বললেন, ‘সূর্যের জন্য কিছুটা ব্যবসা ভালো হচ্ছে। অনেক মানুষই হ্যাট কিনছেন।’ যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন তাঁর হাতে অন করা হ্যান্ড ফ্যান। কর্মসূত্রে এদিন দার্জিলিংয়ে যাওয়া বাবান দে বললেন, ‘গোর্খাল্যান্ডের জন্য পাহাড়ে আগুন জ্বলতে দেখেছি। কিন্তু গোটা পাহাড়ে এবার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে সূর্য। এখন আর জার্জিলিং আসা যাবে না।’
পুজো পর্যটনের আগে যে ভিড়টা দেখা যায় দার্জিলিংয়ে, তা না থাকার মূলেও এই গরম, মনে করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের কথায়, যাঁরা আসছেন, তাঁরাও ফিরে যাচ্ছেন। অযথা কেন হোটেলে থেকে টাকা এবং সময় নষ্ট করবেন। তপ্ত আবহাওয়ায় দার্জিলিংয়ের ছবিটা কালিম্পং এবং গ্যাংটকেও। দিনের পর দিন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় একেই তলানিতে পর্যটন ব্যবসা, তার মধ্যে এমন প্রতিকূল আবহাওয়া ‘কফিনের শেষ পেড়েক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এমন পরিস্থিতির পরিবর্তনের কিছুটা পূর্বাভাস অবশ্য পাওয়া গিয়েছে শনিবার রাতে। সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ের কিছু এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হয়েছে। তবে তাতে কতটা ফল পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলছেন, ‘সোমবার থেকেই অবস্থার বদল শুরু হবে। তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে স্বস্তি ফিরতে পারে বুধবার।‘