পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার ওই বাসিন্দার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে রাজনৈতিক তরজাও।

‘এনআরসি আতঙ্কে’ আত্মঘাতী আগরপাড়ার প্রদীপ করের সুইসাইড নোটের হাতের লেখা কি তাঁরই? পুলিশ সূত্রে খবর, ওই নোটে থাকা হাতের লেখা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে ওই নোটের। অন্য দিকে, খড়দহ থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত প্রদীপের ভাইয়ের স্ত্রী।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার ওই বাসিন্দার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। মঙ্গলবার সকালে আগরপাড়ার ফ্ল্যাটে তাঁর ঘর থেকে প্রদীপের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই ঘরেই মেলে একটি ডায়েরি। সেই ডায়েরির পাতা থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে বলে জানা যায়।
এসআইআর ঘোষণার পর এনআরসি আতঙ্কে কি আত্মঘাতী হয়েছেন প্রদীপ? উঠেছে প্রশ্ন। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল প্রদীপের মৃত্যুর কারণ হিসাবে এনআরসি-কে দায়ী করছে। দাবি, এসআইআর ঘোষণার পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রদীপ। রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে গিয়েছিলেন তিনি। আর পরের দিন সকালে বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। তৃণমূল দাবি করে, প্রদীপের সুইসাইড নোটে এনআরসি-র কথা উল্লেখ রয়েছে। পুলিশও সেই কথা জানায় পরে। সম্প্রতি একটি সুইসাইড নোট প্রকাশ্যে এসেছে। দাবি করা হচ্ছে, সেটাই প্রদীপের লিখে রেখে যাওয়া শেষ বার্তা (যদিও ওই সুইসাইড নোটের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। তবে প্রকাশ্যে আসা ওই সুইসাইড নোটের হাতের লেখা খুব একটা স্পষ্ট নয়। যদিও তাতে প্রদীপের নাম, ধাম, জন্মের সাল এবং এনআরসি-র কথা উল্লেখ রয়েছে।
অবিবাহিত প্রদীপ ভাই এবং ভ্রাতৃবধূর সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন। সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে তিনি নিজের ঘরে শুতে যান। মঙ্গলবার সকালে ভ্রাতৃবধূ বার বার ডেকেও সাড়া না পেয়ে প্রদীপের ভাইকে ডাকেন। প্রতিবেশীরা আসেন। সমবেত ডাকাডাকিতেও সাড়া না মেলায় থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে প্রদীপের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। সূত্রের খবর, প্রদীপের সেই ভ্রাতৃবধূই থানায় ঘটনার লিখিত অভিযোগ করেন। তাঁর ধারণা, কেউ বা কারা প্রদীপকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (দক্ষিণ) অনুপম সিংহ বলেন, “প্রদীপ করের পরিবারের তরফে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার একটি অভিযোগ খড়দহ থানায় গত পরশু রাতে জমা পড়েছে। আমরা সবটা খতিয়ে দেখছি।’’ যদিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সুইসাইড নোট নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি অনুপম। তিনি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে।
অন্য দিকে, প্রদীপের সুইসাইড নোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। তৃণমূল যখন প্রদীপের মৃত্যুর জন্য এনআরসি-কে দায়ী করছে, তখন বিজেপি ওই সুইসাইড নোট নিয়েই সন্দেহপ্রকাশ করছে। জেপি প্রশ্ন তুলেছে, প্রদীপ কি আদৌ লিখতে সক্ষম ছিলেন? এর কারণ মৃত প্রদীপের পরিবারের কয়েক জন সদস্যের মন্তব্য। যে মন্তব্য বলছে, প্রদীপ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর ডান হাতের চারটি আঙুল পুরো নেই। প্রদীপ বাঁ হাতে লিখতেন, এমন কোনও তথ্যও মেলেনি। সেই বিষয়গুলিকে সামনে রেখে সুইসাইড নোটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পদ্মশিবির।
